ভেড়ামারার কৃতি সন্তান মাহিনের হাতে সাফের শিরোপা
হিসনা বাণী প্রতিবেদক।।কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার বাহিরচর ইউনিয়নের বারোদাগ ফেরিঘাট এলাকার জিয়ারুল ইসলাম ও রুপালি খাতুন দম্পতির বড় সন্তান মাহিন। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ভালোবাসতেন। তার প্রতিভাই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। পরিবারের দরিদ্রতা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও খেলা ছাড়েননি কখনও
দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। ভালোবাসেন ফুটবল। শৈশবেই স্বপ্ন দেখেন খেলা দিয়ে চিনবে তাকে। প্রতিভা আর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস বিধায় সেই স্বপ্ন ফিকে হতে থাকে। এ অবস্থায় এগিয়ে আসেন স্থানীয় ফুটবল একাডেমির কোচ।
এভাবেই তার বিশ্বস্ত হাতে ভর করে বাংলাদেশ জয় করে যুব সাফ ফুটবলের শিরোপা। বলছি সম্প্রতি বাংলাদেশ যুব ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইসমাইল হোসেন মাহিনের কথা।
প্রশিক্ষণেরঅভাবে যখন হতাশায় ভুগছিলেন মাহিন তখন এগিয়ে আসেন ভেড়ামারা জুভেন্টাস ফুটবল একাডেমির কোচ আসাদুজ্জামান কচি। তার তত্ত্বাবধানে কঠোর পরিশ্রম, জেদের কারণে সাফল্য আসতেও বেশি সময় লাগেনি। এখান থেকেই মাহিন বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত করা হয় তার নাম। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সম্প্রতি যুব সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের ৬ ফুট লম্বা গোলরক্ষক ১৮ বছরের মাহিন এখন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উঠতি ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা।
সরেজমিনে একাডেমি ঘুরে দেখা গেছে, জুভেন্টাস ফুটবল একাডেমির হয়ে ভেড়ামারা গ্যারেজ ফুটবল মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করছে দেড় শতাধিক তরুণ ও তরুণী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাব্বি, মাহিনের মতো স্বপ্ন দেখছে সবাই। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলার পাশাপাশি বয়সভিত্তিক দলে অংশগ্রহণসহ জাতীয় দলের হয়ে
খেলার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে প্রশিক্ষণ নিতে আসা কিশোর-কিশোরী এসব খেলোয়াড়।
একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, ফুটবল জগতের মানুষ আতিয়ার রহমান ও আসাদুজ্জামান কচি একসময় মাঠ কাঁপিয়েছেন। খেলেছেন বিভিন্ন পর্যায়ে। খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর তারা স্বপ্ন দেখেছেন বাংলাদেশকে খেলোয়াড় উপহার দেওয়ার। এ দুজন নিজের অর্থ ও শ্রমে গড়ে তোলেন জুভেন্টাস ফুটবল একাডেমি। দুজনই দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। কঠোর পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তুলছেন কিশোর-কিশোরী খেলোয়াড়দের। এখান থেকে অনেকে বিকেএসপি, পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীতে খেলোয়াড় হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন।
ইসমাইল হোসেন মাহিন বলেন, দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা সব সময় গর্বের ও আনন্দের। স্বপ্ন দেখেছি একজন ফুটবলার হিসেবে সব সময় দেশের প্রতিনিধিত্ব করার। প্রথম ধাপ পূরণ হয়েছে। ভবিষ্যতে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার মাধ্যমে দেশের সুনাম ও মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে চাই।
মাহিনের মা রুপালি খাতুন বলেন, সবাই আমাকে দেখিয়ে বলছে ওই দেখ মাহিনের মা। মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। ছেলে মাহিন আরও অনেক দূর এগিয়ে যাক এবং সুস্থ থাকুক- এটাই চাওয়া।
একাডেমির ফুটবলার শরিফ ও রাফি বলেন, মাহিন ২০১৭ সালে একাডেমিতে গোলরক্ষক হিসেবে যোগ দেন। আতিয়ার ওস্তাদ ও কচি কাকা মাহিনের প্রশিক্ষণে সর্বদা নজর রেখেছেন। এরপর মাহিনের বিকেএসপিতে সুযোগ হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। সেসময় আতিয়ার ওস্তাদ কচি কাকাসহ একাডেমির সবাই এগিয়ে আসেন। আমরা এখানে একটি পরিবার। এখন মাহিন তার প্ররিশ্রমের ফল পেয়েছে। সাফ ফুটবল অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন দলের গোলরক্ষক সে। দেশ নিজ গ্রামের নাম উজ্জল করেছে। এখন আমাদের মত সব উঠতি খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে ইসমাইল হোসেন মাহিন।
জুভেন্টাস ফুটবল একাডেমির কোচ আসাদুজ্জামান কচি বলেন, আতিয়ার রহমান ওস্তাদ ১৯৯৫ সালে এই একাডেমি গড়ে তোলেন। সে সময় থেকে আমি এ একাডেমিতে রয়েছি। কিশোর- যুবকদের মাদক ও মোবাইল গেমের হাত থেকে বাঁচিয়ে ক্রীড়া জগতে আনার চেষ্টা সব সময় থাকে। বর্তমানে দেড় শতাধিক কিশোর ও ২০ জন কিশোরী ফুটবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। আতিয়ার ওস্তাদের অভিজ্ঞতা ও খেলার প্রতি যে ভালোবাসা রয়েছে তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছি।
মাহিন সম্পর্কে আসাদুজ্জামান কচি বলেন, সে শুরু থেকে অনেক ভালো খেলত। সে আসার পর নিয়মিত কঠোর অনুশীলন করেছে। তার ফলও পেয়েছে। আমার বিশ্বাস, সে আগামীতে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করবে।
গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্য, ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান ইসমাইল হোসেন মাহিন কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, ভেড়ামারার গর্ব সাফ জয়ী ফুটবলার ইসমাইল হোসেন মাহিনকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ সংবর্ধনা সকল উঠতি খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা যোগাবে।
জানতে পেরেছি সেসহ অনেকে জুভেন্টাস ফুটবল একাডেমিতে অনুশীলন করেছে। এই একাডেমী মাহিনদের মত ট্যালেন্ট খেলোয়াড়দের তৃণমূল থেকে উঠিয়ে এনে তৈরী করেছে। যত প্রকার সহায়তা প্রয়োজন উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।