কুষ্টিয়ায় হানিফ-আতাসহ আ’লীগের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
হিসনা বাণী প্রতিবেদক।। কুষ্টিয়ায় এবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ আরও ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর কুষ্টিয়া মডেল থানায় এ হত্যা মামলা করা হয়। মামলার বাদী লুকমান হোসেন কুষ্টিয়া শহরের চর থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে ৫ আগস্ট বিকেলে লুকমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৩) নিহত হয়। শুক্রবার বিকেলে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুল হক চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ১০ থেকে ২০ জনকে। তবে কোনো আসামিকে এ মামলায় এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের সামনে লুকমান হোসেনের চায়ের দোকান রয়েছে। সেখানে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ কাজ করত। তিনি অসুস্থ থাকায় ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া শহরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন। ওই দিন বেলা দুইটার দিকে আবদুল্লাহ ক্লিনিক থেকে বাড়িতে যাচ্ছিল খাবার আনতে। তিনটার দিকে থানাপাড়া ছয়রাস্তা মোড়ে পৌঁছালে সে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের লোকজন এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। আবদুল্লাহ এর মধ্যে পড়ে গিয়ে দিশাহারা হয়ে যায়। আবদুল্লাহ মিছিল থেকে পালানোর সময় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হানিফের চাচাতো ভাই এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তাঁর হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে গুলি করেন। এতে আবদুল্লাহর বুকে গুলি লাগলে সে পড়ে যায়। পরে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আতাউর রহমান এ হত্যা মামলার ২ নম্বর মামলার আসামি। মামলার এজাহারনামীয় উল্লেখ্যযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের নেতা ধীমান, কাটাইখানা মোড়ের বাসিন্দা সোহেল রানা, কালীশংকরপুর এলাকার আরিফ হোসেন, কোর্টপাড়ার বাসিন্দা রনি, সরকারি কলেজ এলাকার বাসিন্দা মিন্টু, আনোয়ার হোসেন, ঈদগাহপাড়ার বাসিন্দা হান্নান বিশ্বাস, কোর্টপাড়ার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম, তরুণ ও নিপুণ। তবে আসামিরা সবাই পলাতক। এ ব্যাপারে জানতে আসামিদের অনেকের মুঠোফোনে কল করলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। ফলে এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাদী লুকমান হোসেন বলেন, তাঁর ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এত দিন থানার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে। তিনি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। এ দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট থানাপাড়ার আড়ংয়ের সামনে রাস্তার ওপর আন্দোলনকারী বাবুকে এলোপাথাড়িভাবে মারপিট ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এঘটনায় রাইসুল হক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মী জনপ্রতিনিধিসহ মোট ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো ৪০-৫০ জনকে। নিহত বাবু কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের শালদহ এলাকার মরহুম নওশের আলীর ছেলে। বাবু পেশায় স্বর্ণকার ছিলেন। বাবু হত্যা মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীকে। এছাড়া এ মামলার আসামি করা হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম বাবুসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মী জনপ্রতিনিধিসহ মোট ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, আব্দুল্লাহ ও বাবু হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় শতাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।