ভেড়ামারায় পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে তসলিম রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ১৩ দিনেও সন্ধান মেলেনি
ভেড়ামারা প্রতিনিধি।। ১৩ নভেম্বর, ২৩ ইং।। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার রায়টা ঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে তসলিম আলী মণ্ডল (৫৫) নামের এক ব্যক্তি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজের ১৩ দিনেও এই ব্যক্তির হদিস মেলেনি। ঘটনাটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নিখোঁজের পরিবার। এঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়েছে। নিখোঁজ তসলিম আলী মণ্ডল ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পশ্চিমপাড়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা।
নিখোঁজ তসলিমের স্ত্রী আদরি খাতুন বলেন, আমরা অসহায় গরীব মানুষ। আমার স্বামী রিকশা চালাতেন। কয়েক দিন আগে বাড়িতে এসেছিল। খাওয়ার জন্য নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিল। এসময় অভিযানে আসা লোকজন আমার স্বামীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নদীতে ফেলে দেন। সে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। জেল জরিমানা দিলে আমাদের কোন অভিযোগ থাকত না। আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক, তাদের শাস্তি দেওয়া হোক।
নিখোঁজ তসলিম আলী মণ্ডলের ছোট ভাই লিটন আলী মণ্ডল বলেন, ঢাকায় রিকশা চালাতেন তসলিম আলী মণ্ডল। সম্প্রতি অবরোধে বাড়ি ফেরেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে টানাটানির সংসার। গত ১ নভেম্বর ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু আবারও অবরোধের ঘোষণা এলে গ্রামেই থেকে যান। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত ১ নভেম্বর বিকেলে একই গ্রামের এক জেলের সঙ্গে পদ্মায় মাছ ধরতে যান। এরপর ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাঁর সন্ধান পেতে পরিবারের লোকজন সাধ্যমতো তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অভাবের সংসারে সেই তৎপরতা কতক্ষণ চালিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। মাঝ নদীতে অভিযান দলের সদস্যরা তসলিমকে লাঠি দিয়ে মারপিট করলে সে নৌকা থেকে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। এখনো তার সন্ধান মেলেনি।
রায়টা গ্রামের মৃত জামাত প্ররামানিকের ছেলে নাজিবুল ইসলাম বলেন, আমি আর নিখোঁজ তসলিম বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেলে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যাই। এসময় স্পিটবোড নিয়ে ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযানে আসেন মৎস কর্মকর্তারা। তাদের সাথে ভেড়ামারা উপজেলার সিনিয়ার মৎস্য অফিসার শাম্মী শিরিন ও পুলিশ ছিল। তারা আমাদের নৌকার কাছে আসে এবং লাঠি দিয়ে তসলিমকে আঘাত করে। তাদের আঘাতে তসলিম নদীতে পড়ে তলিয়ে যায়। এরপর সে পানি ভেসে উঠলে আবারও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর সে নিখোঁজ হয়ে যায় আর আমি পালিয়ে আসি। আমাদের জেল জরিমানা করতে পারত তারা, কিন্তু মারপিট করা ঠিক হয়নি। মাঝ নদীতে নিখোঁজ হয়েছে তসলিম। ১৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি তার। বিষয়টি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
ভেড়ামারা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাম্মী শিরিন বলেন, আমরা রুটিন মাফিক জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সমন্বয়ে স্পিডবোট নিয়ে পদ্মা নদীতে অভিযানে গিয়েছিলাম। গত ১ নভেম্বর বিকেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নৌকা নিয়ে দুই জেলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার রায়টা ঘাট এলাকায় মাছ ধরছিলেন। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে সেখানে স্পিডবোটে অভিযানে যান জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। অভিযানে তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। এ সময় নদীতে অভিযান পরিচালনাকারী স্পিডবোট দেখতে পেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন তসলিম। আমাদের দেখে মাছধরা জেলে নৌকা জোরে চালাতে গিয়ে একজন জেলে পানিতে পড়ে যান। তবে আমরা কোনো জেলেকে আঘাত করিনি।
কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী জানান, সরাসরি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু জেলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার রায়টা ঘাট এলাকায় মাছ ধরছিলেন। খবর পেয়ে ইলিশ শিকার বন্ধে সেখানে অভিযানে যান জেলা ও উপজেলা মৎস কর্মকর্তা। এ অভিযানে তাদের সাথে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। নদীতে অভিযানকারী স্পিড বোট দেখতে পেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হন জেলে তসলিম।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম জহির বলেন, পদ্মা নদীতে মৎস্য কর্মকর্তারা অভিযানে যাবে তা আমাকে আগে থেকে জানায়নি। যে পুলিশ সদস্যরা অভিযানে গিয়েছিল, তাদের এসপি স্যারের নির্দেশে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিকে জীবিত বা মৃত উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন থেকে দুই দিন ডুবুরি দল উদ্ধার কাজ চালিয়েছে। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনটা আমরাও শুনেছি। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে কেউ দোষী হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে দুই পুলিশ সদস্যকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ক্যাম্পের আইসি ও একজন কনস্টেবল।